কোনো পেশাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ সব পেশাই জীবিকা নির্বাহের জন্য় বেছে নেওয়া হয়। কেউ ভালো লাগা থেকে পেশাকে বেছে নেন, কেউ বেছে নেন পেটের দায়ে। তবে অদ্ভূত কিছু কাজ আছে সেগুলোও যে পেশা হতে পারে তা হয়তো চিন্তা করেন না কেউ। অথচ অদ্ভূত কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে নিচ্ছেন অনেকে।
বিশ্বের বুকে এমন অনেক বিচিত্র পেশা আছে যা থেকে মানুষ আয় করছে। এরই একটি হলো জড়িয়ে ধরা। হ্যাঁ, সত্যিই শুনছেন, জড়িয়ে ধরাও একটি পেশা। যেখানে বিশ্বের হাজারো মানুষ কাজ করছেন এবং লাখ টাকা আয়ও করছেন।
ভারতীয় সিনেমা 'মুন্নাভাই এমবিবিএস'-এ আমরা দেখেছি, সারাদিনের ক্লান্ত মানুষটিকে ‘জাদু কি ছাপ্পি’ মানে জড়িয়ে ধরলে মুহূর্তেই সে সব ভুলে যায় এবং হাসিমুখে আন্তরিকতা জানায়। আবার অসুস্থ রোগীকে জড়িয়ে ধরলে তারও সুস্থ হওয়ার প্রেরণা বাড়ে। সিনেমার দৃশ্যে অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত সবাইকে জড়িয়ে ধরতেন। আর কীভাবে একটি মানুষের মানসিক শক্তি জাগ্রত হয় তাই দেখাতেন। এটি ছিল তার সেবার অংশ। এমন সেবাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্বের অনেক মানুষ।
আরও পড়ুন: টিনিটাস: কানের মধ্যে বিরক্তিকর শব্দ
পেশাদার আলিঙ্গনকারীরা এই পেশায় যেকোনো মানুষকেই টাকার বিনিময়ে জড়িয়ে ধরেন। এটি মূলত স্পর্শ থেরাপি। জাতি, ধর্ম-বর্ণ কোনো কিছুই ব্যাপার না তাদের কাছে। কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীকেও তারা টাকার বিনিময়ে জড়িয়ে ধরেন। সেবাগ্রহণকারী চাইলে নিজের পছন্দমতো সেবাদানকারীকে বেছেও নিতে পারেন। কারণ এই পেশায় নারী ও পুরুষ উভয়ই সেবা দিয়ে থাকে। প্রতি ঘণ্টা হিসাবে টাকা নির্ধারণ করা রয়েছে। যা থেকে তারা ঘণ্টাপ্রতি প্রায় ৬৫০০ টাকা আয় করছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই সেবার সুযোগ রেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষ যখন স্নেহ ও আন্তরিকতার অভাব অনুভব করেন তখন তার আলিঙ্গনের প্রয়োজন হয়। এতে তার শরীরে হরমোন অক্সিটোসিন নিঃসরণ করে। যা একাকীত্ব ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। এই থেরাপি বিষণ্নতা দূর করে, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে, ব্যথা, উদ্বেগ, আগ্রাসন, চাপ কমায়। মানুষের মধ্যে শিথিলতা আনে।
স্পর্শ থেরাপি বা কাডল থেরাপিতে স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সমস্যার চিকিৎসায় করা হয়। এই পেশায় কর্মরতরা জানান, বেশিরভাগ সেবাগ্রহণকারীর বয়স ২০ থেকে ৭৫ বছর। একাকীত্ব, আঘাতজনিত সমস্যা, অক্ষমতা বা মানসিক যন্ত্রণায় যারা বেশি ভোগেন তারাই এই সেবা নেন।
‘জড়িয়ে ধরা’ কথাটি সহজ মনে হলেও কাজটি ততটা সহজ নয়। সেবাদানকারীজড়িয়ে ধরা, হাত ধরা, মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া, সুড়সুড়ি দেওয়া, সিনেমা দেখা, গান শোনা কিংবা গল্প করাসহ আনন্দ দেওয়ার মতো কাজগুলো করেন। যা রোগী তার প্রিয়জনের কাছ থেকে আশা করেন। কাছের মানুষগুলো থেকে যারা দূরে থাকেন তারাই প্রশান্তির জন্য এই সেবা নেন। তবে এই পেশায় শারীরিক সম্পর্ক করার কোনো অনুমতি থাকে না।
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এই পরিষেবা দিচ্ছে। যারা এই পেশায় আসেন তাদের সহানুভূতিশীল, যত্নশীল হতে হয়। সেবাগ্রহণকারীকে বোঝার ক্ষমতা থাকতে হয়। সেই অনুযায়ী সেবা প্রদান করতে হয়। এই ক্ষেত্রে সর্বাধিক নিরাপত্তা দেওয়ারও ব্যবস্থা করে সংস্থাগুলো।
সূত্র: এথিস